গোষ্ঠীতত্ত্বের লৌহবিধি-ধারণাটি ব্যাখ্যা কর। রবার্ট মিশেলস এর এলিট তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।

মুষ্টিময়ের লৌহবিধি-ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।

ঊনিশ শতকের ও বিশ শতকের প্রথমার্ধে দুজন ইটালীয় সমাজবিজ্ঞানী এলিট তত্ত্বের আলোচনার সূত্রপাত করেন। এছাড়া এলিট তাত্ত্বিকদের মধ্যে রবার্ট মিশেলস এলিট তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। রবার্ট মিশেলসের এলিট তত্ত্বকে গোষ্ঠীতত্ত্বের লৌহবিধি নামে অভিহিত করা হয়েছে। নিম্নে গোষ্ঠীতত্ত্বের লৌহবিধি/মুষ্টিময়ের লৌহবিধি/রবার্ট মিশেলস এর এলিট তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর হলোঃ

গোষ্ঠীতত্ত্বের লৌহবিধি কি

রবার্ট মিশেলস তাঁর 'Political Parties' নামক গ্রন্থে এলিট তত্ত্বের অবতারণা করেন। তাঁর তত্ত্ব গোষ্ঠীতত্ত্বের লৌহবিধি নামে পরিচিত। তার মতে সকল রাজনৈতিক গোষ্ঠীতত্ত্বের লৌহবিধির মাধ্যমে শাসিত ও পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, “প্রতিটি সংগঠনের নির্বাচকগণের উপর নির্বাচিত ব্যক্তিদের প্রতিনিধি প্রেরকদের উপর প্রতিনিধিদের আধিপত্য বিস্তারের পথ সৃষ্টি করে দেয়। 

সংগঠন বলতে গোষ্ঠীতত্ত্ব বুঝানো হয়। এটা বৃহৎ সংগঠনের মতো রাজনৈতিক দলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। কারণ সকল রাজনৈতিক দলে কতিপয় ব্যক্তিই নেতৃত্ব প্রদান করে। 

মিশেলস বলেন, “আধিপত্যশীল শ্রেণি ব্যতীত কোন সংঘ হতে পারে না, সকল রাজনৈতিক দলই হলো অল্পসংখ্যক লোক দ্বারা পরিচালিত সংগঠিত প্রতিষ্ঠান।” (No association can do without a dominant class. All political parties are organised oligarchy) 

তাঁর মতে, রাজনৈতিক দলের কাঠামো যতই গণতান্ত্রিক হোক না কেন সেখানে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির প্রাধান্যই বিদ্যমান। গণতন্ত্রে ছদ্মাবরণে দলীয় ব্যবস্থায় গোষ্ঠীতন্ত্রই প্রাধান্য বিস্তার করে। 

রাজনৈতিক দলে গোষ্ঠীতত্ত্ব বিদ্যমানের কারণ

রবার্ট মিশেলস এর মতে রাজনৈতিক দলে গোষ্ঠীতত্ত্ব বিদ্যমান থাকার কারণগুলো নিম্নে দেয়া হলো : 

১. সকল রাষ্ট্র বা সংগঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন থাকে।

২. সকল ব্যক্তির দক্ষতা, যোগ্যতা ও আগ্রহ সমান থাকে না, এজন্য মুষ্টিমেয় ব্যক্তির আধিপত্য মেনে নেয়।

৩. মনস্তাত্ত্বিকভাবে অধিকাংশ ব্যক্তি মুষ্টিমেয় ব্যক্তির আধিপত্য মেনে নেয়।

৪. বৃহৎ সংগঠনে সকল ব্যক্তির একত্রে সমাবেশ করা বা সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়।

রবার্ট মিশেলস এর মুষ্টিময়ের লৌহবিধির সমালোচনা

১. মিশেলের গোষ্ঠীতত্ত্বের লৌহবিধি সর্বজনীন নয়। সকল সংগঠনে এটি প্রযোজ্য নয়। 

২. সংগঠনে কতিপয় ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, তারা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে।

৩. সংগঠনের সকল সদস্যের মুষ্টিমেয় ব্যক্তি দলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এটা ঠিক নয়। পাশ্চাত্য দেশে রাজনৈতিক দলে প্রযোজ্য নয়।

৪. সংগঠনের সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতেই মুষ্টিমেয় ব্যক্তির সিদ্ধান্ত করেন। এর ব্যতিক্রম সংগঠনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, এতসব সমালোচনা সত্ত্বেও মিশেলের মতবাদ গ্রহণযোগ্য ও সত্য বলে প্রমাণিত। যে কোন সংগঠনে মুষ্টিমেয় ব্যক্তি প্রভাব বিস্তার করে। পাশ্চাত্য লেখক মরিস ভুজারজার, নিউম্যান, লাপালোম করার গবেষণাই এটা প্রমাণিত হয়েছে।

পূর্ববর্তী পরবর্তী
No Comment
মন্তব্য করুন
comment url