রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর।



রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক | অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক | রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মাঝে সম্পর্ক - Relationship Between Political Science and Economics


 রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির কিভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করে তা ব্যাখ্যা  | রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান — উক্তিটি আলোচনা করুন

অতীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিকে একই বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হত। প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকণ এই শাস্ত্রকে পলিটিক্যাল ইকোনোমি বলে অভিহিত করেছেন। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত অনেক লেখক অর্থনীতিকে একটি পৃথক বিষয় বলে গণ্য করতেন না। তাঁদের মতে অর্থনীতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি অংশ। কিন্তু বর্তমানে কেউই আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিকে একত্রিত বলে বিবেচনা করেন না। আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ অর্থনীতিকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান বলে দাবী করেন। যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটলের "The politics" গ্রন্থটির বিরাট অংশ জুড়ে আছে অর্থনীতির আলোচনা। অর্থনীতিবিদ এ্যাডাম স্মিথের The Wealth of Nations এবং জন লকের 'সরকারের দ্বিতীয় চুক্তি' গ্রন্থগুলো রাষ্ট্রনৈতিক অর্থনীতি আলোচনায় সমৃদ্ধ।


রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হল একটি উন্নত ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রগঠন। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আর এম. ম্যাকাইভার "Web of Government" গ্রন্থে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির সম্পর্কের কথা সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন সকল শাসন ব্যবস্থা এর অনুরূপ সম্পত্তি ব্যবস্থার রূপ পরিগ্রহ করে। একটিকে পরিবর্তন করলে অপরটিও পরিবর্তিত হয়। মধ্যযুগীয় ইউরোপে সামন্ততান্ত্রিক সরকারের উত্থান, উনবিংশ শতাব্দীতে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের বিকাশ এবং বিংশ শতাব্দীতে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রচার ও প্রসার অর্থনৈতিক ব্যবস্থারই ফলস্বরূপ। মার্কসীয় দর্শন এবং সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অর্থনৈতিক আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ঐতিহাসিকভাবেই রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর অর্থনৈতিক প্রভাব সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।

আধুনিক রাষ্ট্র জনগণের সদিচ্ছা ও সহযোগিতার উপর প্রতিষ্ঠিত। জনগণের সার্বিক উন্নতি সাধনের জন্য রাষ্ট্র অর্থনৈতিক কাঠামোকে নিয়ন্ত্রিত করে। শাসকশ্রেণী শুধু প্রশাসনিক দায় দায়িত্ব পালন করে না। বরং উৎপাদন, বন্টন, ভূমিসংস্কার, ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্যচুক্তি মুদ্রা পরিকল্পনা ইত্যাদি অর্থনৈতিক কার্যদিও সম্পাদন করে থাকে। সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং বাজেটের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এছাড়া নির্বাচনী ফলাফলও রাজনৈতিক দলের অর্থনৈতিক কর্মসূচীর ভিত্তিতে অনেকটা নির্ধারিত হয়ে থাকে। অর্থনীতি সমাজের ভিত্তি সুদৃঢ় ও সুগঠিত করতে সহায়তা করে। এ সকল দিক বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি পরস্পর নির্ভরশীল।


রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত

অধ্যাপক গার্নার উল্লেখ করেন যে, সরকারের ধরন, কার্যকলাপ, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দ্বারা প্রভাবিত হয়। আধুনিক কল্যাণ মূলক রাষ্ট্রকে নানাবিধ অর্থনৈতিক কার্যে নিয়োজিত থাকতে হয়। অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে থাকে। সুতরাং রাষ্ট্রনীতি এবং অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি অনেকটা অর্থনৈতিক উন্নতির ও অগ্রগতির উপর নির্ভর করে। অপরদিকে উৎপাদন বন্টন ব্যবহার ও বিনিময় ব্যবস্থা আধুনিক যুগে রাষ্ট্র দ্বারা নির্ধারিত হয়। গণতান্ত্রিক সমাজে বহুবিধ অর্থনেতিক সমস্যা দেখা দেয়, যার সমাধান রাষ্ট্র ব্যতীত কোন ব্যক্তিবিশেষ বা প্রতিষ্ঠান করতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও এর শর্তাবলী রাষ্ট্রই নির্ধারণ করে থাকে। আধুনিক রাষ্ট্রের সমস্যাবলী মূলত অর্থনৈতিক সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, শিল্পব্যবস্থা, জাতীয়করণনীতি, শিল্পনীতি, শ্রমিক মালিক সম্পর্ক, মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। এভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
পূর্ববর্তী পরবর্তী
No Comment
মন্তব্য করুন
comment url