রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞান (Political Science and Psychology) | রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক কালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্যে রাজনীতির জটিল সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। শত বছর পূর্বে পণ্ডিত বেজহট্ তাঁর Physics and Politics নামক গ্রন্থে মনোবিজ্ঞানের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। গ্রাহাম ওয়ালেস তাঁর Human Nature in Politics নামক গ্রন্থে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কের কথা বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন। লাসওয়েল Politics who gets, what, when and how গ্রন্থে মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রতত্ত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের চিন্তার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছেন। লর্ড ব্রাইস যথাযথ বলেছেন, "রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিকড় রয়েছে মনোবিজ্ঞানের মধ্যে" (Political Science has its roots in psychology)। বর্তমানকালে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনৈতিক কার্যাবলী মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্লেষণ করা যায়।

বর্তমান বিশ্বে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনমতের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যমণ্ডিত। জনমত গঠনে মনোবিজ্ঞানের সূত্রগুলো বিশেষভাবে কার্যকর। কোন দেশের শাসন ব্যবস্থা সে দেশের জনসাধারণের আশা আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামারস্যপূর্ণ না হলে তা সুফল বয়ে আনে না। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গার্নারের বক্তব্য প্রাণিধানযোগ্য। তিনি বলেন শাসন ব্যবস্থায় জনসাধারণের ধ্যান ধারণার যথার্থ প্রতিফলন ঘটলেই সরকার জনপ্রিয় ও স্থায়ী হয়। সরকারের মধ্যে শাসিতের মানবিক ধারণা এবং নৈতিক বিশ্বাসের প্রতিফলন না ঘটলে সরকার দীর্ঘস্থায়ী ও স্থিতিশীল হতে পারে না। মানুষের আচার-আচরণ সংক্রান্ত সমস্যায় মনোবিজ্ঞান পদ্ধতির প্রয়োজন সফলতার দ্বার খুলে দিয়েছে। জাতীয়তার ধারণা, রাজনৈতিক দল, জনমত, নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়গুলো আবেগ অনুভূতির দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দল-উপদল ও গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ মনোবিজ্ঞানের সূত্র ধরে বিশ্লেষণ করা হয়। যুদ্ধ-বিপ্লব ও শ্রেণী স্বার্থের অনেক সমস্যা মনোবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত পথে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। রাষ্ট্রের মূল সমস্যা হল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। মানুষ কেন ক্ষমতা চায়? কার হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত হলে ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার হবে, ক্ষমতার ব্যবহার কিভবে হওয়া উচিৎ? বিপ্লব কেন হয়? কিভাবে বিপ্লবকে প্রতিহত করা যায় ইত্যাদি বিষয় মনোবিজ্ঞানের আলোকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করতে পারেন।

একথা সত্য যে, রাজনীতি কেবল বিচারবুদ্ধি প্রসূত নয়। মানুষ যুক্তিবাদী ও বিবেকসম্পন্ন জীব হলেও অনেক সময় বিভিন্ন দেশে যে গণআন্দোলন সংগঠিত হয়ে তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তা ভাবাবেগের এক বিশেষ অভিব্যক্তি মাত্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লো বলেন, "মানব মনকে জেনেই রাষ্ট্রকে জানতে হবে"। রাষ্ট্র নাগরিকদের মন-মানসিকতাকে রাষ্ট্রীয় নীতি ও কর্মের দ্বারা প্রভাবিত করতে সক্ষম। জার্মানীর হিটলার, ইতালীর মুসোলিনী জনসাধারণের কর্মকান্ডকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ ও উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্মপন্থা কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে তা এর প্রকৃত উদাহরণ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে সবসময় মনোবিজ্ঞান পদ্ধতি প্রযোজ্য নয়। মনোবিজ্ঞান মানসিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। আদর্শ নিয়ে আলোচনা করে না। মানুষের সমস্ত রাজনৈতিক কার্যকলাপ মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে রাজনীতির অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। মানুষের আচার আচরণ সংক্রান্ত সমস্যায় মনোবিজ্ঞান পদ্ধতির প্রয়োগ সফলতার দ্বার খুলে দিয়েছে। আধুনিক কালে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে সম্পন্ন হচ্ছে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মনের গতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব।

পূর্ববর্তী পরবর্তী
No Comment
মন্তব্য করুন
comment url