রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত জৈবিক মতবাদটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর



রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত জৈবিক মতবাদ
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে জৈব মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করার চেয়ে রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে বেশী ব্যাখ্যা করে। রাষ্ট্র ও জীব দেহের মধ্যে সাদৃশ্য নির্দেশ করে জৈব মতবাদ প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয় যে, রাষ্ট্র এক জীবন্ত সত্ত্বা। এ মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্র এক প্রকার চেতনা সম্পন্ন পদার্থ এবং প্রাণসঞ্জাত দেহ। এটি কোন নিষ্প্রাণ যন্ত্র নয়।

জৈবিক মতবাদ কি?

জৈব মতবাদের প্রথম বিকাশ ঘটে প্রাচীন গ্রীসে। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো রাষ্ট্রকে জীবদেহের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি মানব আত্মার (Human soul) তিনটি উপাদান প্রত্যক্ষ করে তাঁর কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রে তিনটি শ্রেণীর অস্তিত্বের কথা বলেন । এই তিনটি শ্রেণী ভিন্নধর্মী কাজে নিয়োজিত থাকবে বলেও তিনি যুক্তি দেখান । প্লেটোর মত তাঁর শিষ্য এরিস্টলও (Aritstotle) মত প্রকাশ করে বলেন যে জীবদেহের সাথে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যেমন সম্পর্ক রয়েছে রাষ্ট্রের সাথেও ব্যক্তির তেমনি সম্পর্ক বিদ্যমান।

মধ্যযুগেও কোন কোন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ রাষ্ট্রদেহ এবং জীবদেহের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছেন। জন অব সেলিসবারী এব মার্সিলিও অব পদুয়ার চিন্তাভাবনা এক্ষেত্রে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

আধুনিক যুগে, ডারউইন, বন্টুসলী, হাবার্ট স্পেন্সর প্রমুখ দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে জৈব মতবাদের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। হস রাষ্ট্রকে এক অতিকায় সামুদ্রিক জীবের সাথে তুলনা করেছেন। ডারউইন তাঁর বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে জৈব মতবাদেরই প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ন্টলীও রাষ্ট্রকে এক প্রাণবন্ত জৈবিক প্রতিষ্ঠান বলে বর্ণনা করেন। হার্বাট স্পেন্সার বলেছেন, জীব দেহের মত রাষ্ট্রও জন্ম বৃদ্ধি এবং মৃত্যুর বিধিবিধান দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতপক্ষে জীবদেহ ও রাষ্ট্রদেহের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে সত্য। কিন্তু তাই বলে উভয়ের প্রকৃতি যে সম্পূর্ণ এক তা বলা চলে না। অধ্যাপক হব হাউজ (Hob House) বলেন, রাষ্ট্রকে প্রাণী বা জীব হিসেবে কল্পনা করা ঠিক নয়। আসলে জৈবিক মতবাদও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়।

জৈবিক মতবাদের সমালোচনা 

• বলা যায় যে, জৈব মতবাদ কেবল সাদৃশ্যের উপর ভিত্তিশীল। কিন্তু সাদৃশ্য বা মিল কখনো প্রমাণ বলে স্বীকৃত হতে পারে না। 

• দ্বিতীয়ত জীবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এক সঙ্গে সংযুক্ত থাকে পক্ষান্তরে রাষ্ট্রদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ (সংঘ সমূহ) পরস্পর বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে।

• জীবদেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যান্ত্রিক অংশবিশেষ। এগুলো স্বতন্ত্রভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। অপরদিকে রাষ্ট্রদেহ চেতনশীল এবং স্বাধীনভাবে টিকে থাকতে পারে ।

• এক জীবদেহ থেকে অন্য জীনদেহ জন্মলাভ করে। কিন্তু এক রাষ্ট্র থেকে অপর রাষ্ট্রের জন্ম না-ও হতে পারে। জীবদেহের বৃদ্ধি ঘটে সম্পূর্ণ অচেতনভাবে। কিন্তু রাষ্ট্রের বৃদ্ধি ঘটে সচেতনভাবে।

• জৈবিক মতবাদের সমালোচনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক গেটেল ( Gettell) যথার্থই বলেছেন যে, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে জৈব মতবাদ কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করে না। এমন কি রাষ্ট্রের কার্যাবলী সম্পর্কেও এটি কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয় না।

শেষকথা

এ পাঠের মূল বক্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্র এক প্রকার জীবন্ত সত্ত্বা। রাষ্ট্র কোন নিষ্প্রাণ যন্ত্র বিশেষ নয়। প্রাচীন গ্রীক যুগে প্লেটো থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের অনেক দার্শনিক যেমন, ডারউন, হার্বাট স্পেন্সার প্রমুখ রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে জৈব মতবাদের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তারা সকলেই এ বিষয়ে একমত যে, জীব দেহের মত রাষ্ট্রও জন্ম বৃদ্ধি ও মৃত্যুর বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়।

এ পাঠটি পড়ে আপনি – যে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন: 

* জৈব মতবাদ কি?
* জৈব মতবাদ সম্পর্কে লিখ।
* জৈব মতবাদ কাকে বলে?
* জৈব মতবাদের মুল বক্তব্য কি?
* রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত জৈবিক মতবাদটি ব্যাখ্যা কর।
 * 'রাষ্ট্র এক জীবন্ত সত্ত্বা, এটি কোন নিষ্প্রাণযন্ত্র না-এ বক্তব্যটি ব্যাখ্যা করুন।
 * জীবদেহ ও রাষ্ট্র দেহের মধ্যকার সাদৃশ্য বর্ণনা করুন।
পূর্ববর্তী পরবর্তী
No Comment
মন্তব্য করুন
comment url