বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্যগুলো 

ভূমিকা : বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালো ২৬ মার্চ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা উত্তর পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল "Friendship to all but malice to none.' অর্থাৎ, সবার সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে বৈরিতা নয়। পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে বিভিন্ন উপাদান ক্রিয়াশীল থাকে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট্য: বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে দেওয়া হলো : 

১. সহযোগিতামূলক মনোভাব: বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সহযোগিতামূলক মনোভাব বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে তার পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করে। অর্থাৎ, একটা রাষ্ট্র যাতে করে অন্য রাষ্ট্রের জন্য হুমকি না হয়, সেজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব ব্যক্ত করেন।

২. ভৌগোলিক অবস্থান: পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভৌগোলিক উপাদান বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক উপাদান অন্যতম নির্ধারক শক্তি হিসেবে কাজ করে। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশের তিনদিকে ভারত এবং দক্ষিণপূর্ব অংশে মায়ানমারের সাথে সংযোগ থাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এ দুটি রাষ্ট্রের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

৩. জাতীয় শক্তি : কোন রাষ্ট্রের জাতীয় শক্তি যত বেশি শক্তিশালী হবে, সে রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জাতীয় শক্তি (National Power) পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে স্বাধীনতা উত্তর সময়ে বাংলাদেশের দুর্বল জাতীয় শক্তির জন্য পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

৪. জাতীয়তাবাদ : বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ (Nationalism) অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় মূলত জাতীয়তাবাদী চিন্ত ধারা থেকে, যার প্রতিফলন ঘটে ১৯৫২ ও ১৯৭১ সালে, যার ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী তথা বর্তমান সময়েও পররাষ্ট্রনীতিতে জাতীয়তাবোধ দারুণভাবে প্রভাবিত করে।

৫. ইতিহাস ও ঐতিহ্য : একটা রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে ইতিহাস ও ঐতিহ্য অন্যতম নির্ধারক শক্তি হিসেবে কাজ করে, যার কারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের সময় এর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।

৬. জনমত : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে জনমত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেহেতু বৈদেশিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটা রাষ্ট্রের সার্বিক জনমতকে কেউ উপেক্ষা করতে পারে না, সেহেতু বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় জনমত বাংলাদেশের রাজনীতিতে তথা পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী, বহুমুখী এবং ব্যাপক । বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য হলো সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে চায় ।

পূর্ববর্তী পরবর্তী
No Comment
মন্তব্য করুন
comment url