অর্থনৈতিক ও সামরিক নীতিনির্ধারণে ভূ-রাজনীতির ভূমিকা আলোচনা কর।

ভূমিকা : ভৌগোলিক অবস্থানগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি দেশ নিজের ভূ-রাজনীতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। সে কারণে ভূ রাজনৈতিক অবস্থান যে কোনো দেশের জন্য শক্তির নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে প্রতিটি দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান ভিন্ন হয়।

অর্থনৈতিক ও সামরিক নীতিনির্ধারণে ভূ-রাজনীতির ভূমিকা : নিম্নে অর্থনৈতিক ও সামরিক নীতিনির্ধারণে ভূ-রাজনীতির ভূমিকা আলোচনা করা হলো :

অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে ভূ-রাজনীতির ভূমিকা : মূলত ভূ-রাজনীতি একটি নীতিনির্ধারণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে নিম্নের ক্ষেত্রেগুলোতে ভূমিকা অধিক।

১. রাষ্ট্রীয় সম্পদ নির্ধারণে ভূমিকা : যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ভূ-রাজনীতির একটি অংশ। যেহেতু কোনো রাষ্ট্রই সম্পূর্ণ নয়, তাই নানা প্রয়োজনে তাদেরকে অন্য রাষ্ট্রের সাথে। যোগাযোগ রক্ষা ও নির্ভর করে চলতে হয়। আর এ বিষয়গুলো রাজনীতিতে অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে সহায়তা করে।

২. সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভূমিকা : প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রকৃতির উপর কোনো রাষ্ট্রের নীতিমালা অনেকাংশে নির্ভরশীল। কারণ বৃহৎ রাষ্ট্র কোনো প্রতিবেশী ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতিকে প্রভাবিত করে। তাছাড়া বৃহৎ রাষ্ট্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নে সহায়তা করে।

৩. উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব : কোনো দেশের উৎপাদনশীলতায় অন্যতম ভূমিকা পালন করে ভৌগোলিক অবস্থান। উৎপাদনের নিয়ামকগুলোও ভূ-রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়।

৪. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভূমিকা : ভূ-রাজনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে বহুলাংশে প্রভাবিত করে। কম খরচের মাধ্যমে বহু অর্জনই এর লক্ষ্য। তাই ভূ-রাজনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।

৫. যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব : ভূ-রাজনীতির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বহু পরিবর্তন এসেছে। পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তনও যোগাযোগ ব্যবস্থার জটিলতার একটি কারণ। অর্থাৎ ভৌগোলিক অবস্থানগত ভিন্নতার কারণে যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ভিন্ন হয়।

সামরিক নীতিনির্ধারণে ভূ-রাজনীতি : 
ভূ-রাজনীতি বলতে গেলে কোনো দেশের প্রায় সব দিকেই কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে। সামরিক নীতিনির্ধারণে ভূ-রাজনীতির ভূমিকা অপরিসীম। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সেনাবাহিনী গঠন : ভূ-রাজনীতির কারণেই স্থল, জল ও আকাশপথে প্রতিটি দেশ সামরিক বাহিনী গঠন করে থাকে। যেমন স্থলবেষ্টিত দেশ স্থলবাহিনীর প্রতি এবং জলবেষ্টিত দেশ নৌবাহিনীর প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।

২. জাতীয় নিরাপত্তা নির্ধারণে ভূমিকা : ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি দেশের নিরাপত্তা কাঠামো ভিন্ন হয়। স্থলবেষ্টিত দেশে সামরিক কাঠামো একরকম আবার সমুদ্রবেষ্টিত দেশে অন্যরকম। অন্যদিকে স্থল-জল উভয় বেষ্টিত দেশে সামরিক কাঠামো ভিন্ন হয়ে থাকে।

৩. অস্ত্র প্রতিযোগিতা : বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অস্ত্র  প্রতিযোগিতার অন্যতম কারণ ভূ-রাজনীতি। যেমন- ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলছে মূলত কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। যদিও অস্ত্র ক্রয়ে উভয় রাষ্ট্রই বিলিয়ন বিলিয়ন খরচ করছে, তার আশু সুরাহা সম্ভব হচ্ছে না। আর এ  প্রতিযোগিতার মূল কারণ ভূ-রাজনীতি।

৪. প্রতিবেশী নিয়ন্ত্রণ : মূলত ভূ-রাজনীতির কারণে এ প্রতিবেশী রাষ্টগুলো একে অপরকে ডোমিনেট করতে চায়। এক্ষেত্রে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সদা তৎপর। যেমন- ভূ রাজনীতির কারণে চীন অনেক রাষ্ট্রের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে সক্ষম।

৫. সামরিক সরঞ্জাম জোগাড় : ভূ-রাজনীতি সামরিক সরঞ্জাম জোগাড় করার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া যুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনার নীতিনির্ধারকও ভূ-রাজনীতি ।

উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্রতিটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ভূ-রাজনীতির নির্ধারক। ভূ-রাজনীতির কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করছে। ভূ রাজনীতি বলতে গেলে রাষ্ট্রের সকল নীতিনির্ধারণের হাতিয়ার। তাই এর বা ভূমিকা বর্ণনাতীত।

পূর্ববর্তী পরবর্তী
No Comment
মন্তব্য করুন
comment url